করোনা দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে সিলেটে ধ্বস নেমেছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়। গত ২৩ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের বেশীরভাগ রেস্টুরেন্ট। এরপর ছুটি শেষ হলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খুললেও সাধারণভাবে খুলেনি রেস্টুরেন্টগুলোও।
পর্যটননগরী সিলেটে গত কয়েকবছরে জমজমাট হয়ে উঠে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। পুরানো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িদের পাশাপাশি এ ব্যবসা শুরু করেন তরুণরা। অনেকেই পড়ালেখার পাশাপাশিও শুরু করেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। ফলে গত কয়েক বছরে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, উপশহর, জেলরোড, কাজীটুলা, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় গেইট, দরগাহ গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠে ছোট-বড় কয়েকশ রেস্টুরেন্ট। যেগুলোর বেশীরভাগই তরুণ উদ্যোক্তাদের হাতে গড়া। নানা বৈচিত্রে চালু হওয়া এসব রেস্টুরেন্ট চলছিলও বেশ জমজমাটভাবে। সারাদিনই রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় লেগে থাকত।
কিন্তু, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই ধ্বস নামতে শুরু করে এই ব্যবসায়। রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও মালিকদের মাসে মাসে গুনতে হচ্ছে ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, স্টাফদের বেতনসহ নানা খরচ। যা বহন করা এখন মালিকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর কেউ কেউ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ি হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালূ করলেও সেক্ষেত্রে বিক্রি কমেছে আগে চেয়ে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া বেশীরভাগ রেস্টুরেন্টই শুধু বাবুর্চিদের রেখে বাকি স্টাফদের চাকরি থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। এতে শুধু সিলেটেই কর্মহীন হয়েছেন প্রায় সহস্রাধিক রেস্টুরেন্টকর্মী।
নগরীর নয়াসড়ক এলাকার ইয়াম্মি হাট রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী হুমায়ুন কবীর সুহিন বলেন, প্রায় একদশক ধরে সিলেট শহরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করছি, এরকম অবস্থা কখনো কাটাতে হয়নি। এই অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে সিলেটের অর্ধেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।
সিলেট ক্যাটারার্স গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেটের সুনামধন্য উনদাল রেস্টুরেন্টের পরিচালক সালাহ উদ্দিন বাবলু বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। গত তিনমাস রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও আমাদের কর্মচারি, বাবুর্চিদের বেতন দিতে হয়েছে। বর্তমানে টেক ওয়ে চালু আছে। কিন্তু সিলেটে টেক ওয়ে ব্যবস্থা এখনো তেমন জনপ্রিয় নয়। সাধারণ সময়ের বিক্রির চেয়ে টেক ওয়েতে বিক্রি কয়েকগুণ কম। তাই টেক ওয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
এ ব্যপারে সিলেট ক্যাটারার্স গ্রুপের সভাপতি ও স্পাইসি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্ত দেব বলেন, দীর্ঘদিন রেন্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় মালিকরা সঙ্কটে আছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া ছাড়া আমাদের কোন রাস্তা থাকবে না। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার দাবি জানিয়েছি কিন্তু কোন সদুত্তর পাইনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিভিন্ন খাতকে প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কোনোখাতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। আমরা প্রতি বছর দেশের অর্থনীতিতে বড় জোগান দিচ্ছি। আমাদের যদি সরকার এই সময়ে সহায়তা না করে তা হলে ব্যবস্যা গুটিয়ে নিতে হবে।
Leave a Reply